ধারাবাহিক উপন্যাসঃ নাইয়র (পর্ব-দুই) Good Luck

লিখেছেন লিখেছেন মামুন ০৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০৮:১৩:২০ রাত



২.

ভীমকাঠী ইউনিয়ন পরিষদ অফিসটি বাজারের পশ্চিম পাশে। এর অর্ধেক খালের ভিতরে পড়েছে। সেখানে বাঁশ গেড়ে টিন দিয়ে ঘেরার পর মাটি ফেলে ভরাট করা হয়েছে। গত টার্মে মালেক চেয়ারম্যান বিজয়ী হয়ে এই সংস্কারটুকু করেছিলেন। তিনি 'কাবিখা' কর্মসুচীর আন্ডারে এই কাজটি করিয়ে নেন। এরকম আরো অনেক কাজ করলেও তাঁর শেষ রক্ষা হল না। এবারের নির্বাচনে তিনি হেরে গেছেন। ১৭ বছর একটানা চেয়ারম্যান ছিলেন। আর তাকেই কিনা হেরে যেতে হল এক পুচকে ছোড়ার কাছে! তিনি এ নিয়ে নির্বাচন পরবর্তী সময়ে বহুবার গ্রামবাসীর কাছে আক্ষেপ করেছেন। তবে তাঁর পরাজয়ে নিজের কিছু খয়ের খাঁ এবং দলীয় সমর্থক ছাড়া আর বাকিরা মনে মনে খুশীই হয়েছে । তার আমলে এলাকার উন্নয়নের চেয়ে তিনি তাঁর নিজের উন্নতির দিকেই বেশী নজর দিতেন।

মালেক শিকদারের বাড়ী গ্রামের একেবারে শেষ মাথায়। তবে ঐ দিক দিয়ে আবার নাজিরপুর উপজেলার প্রধান রোডের সাথে একটা লিঙ্ক রয়েছে। বাঁধা হয়ে ছিল একটি সরু খাল। তিনি সেই খালের ওপর একটা কালভার্ট বানালেন। মাটি ফেলে নিজের বাড়ি পর্যন্ত ইটের সলিং রাস্তা করিয়ে নিলেন। আর শ্রীরামকাঠী বাজার থেকে বর্ষার সময়ে এখনো মানুষকে হাঁটু পর্যন্ত কাদার ভিতর দিয়ে চলাচল করতে হয়। রাস্তার অবস্থা দেখে মনে হয় কয়েকটা মোষের গাড়ি বুঝি এই মাত্র ইচ্ছেমত চলাচল করেছে।বাজার থেকে খালের পাশ দিয়ে এই গ্রামের সীমানা উত্তর-দক্ষিণে আধাঝুড়ির খাল পর্যন্ত। সেই রাস্তায় ৬ টা কালভার্ট এর দরকার হলেও তিনি দু'টি বানিয়েছেন। বাকীগুলোতে কাঠের পুল দিয়ে কাজ সেরেছেন। সেগুলোও নির্বাচনের আগ দিয়ে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়লে কিছুটা সংস্কার করেন।

ইউনিয়ন পরিষদ অফিসে বসে বসে এগুলোই ভাবছিলেন সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক শিকদার। ক্ষমতাসীন দলের উপজেলা সভাপতি। একটা সালিস এর ব্যাপারে তিনি সহ আরো কয়েকজন বর্তমান চেয়ারম্যানের জন্য অপেক্ষা করছেন। বাইরে একটা হোন্ডার আওয়াজ। স্টার্ট বন্ধ হল। এর মিনিট দুইয়ের ভিতরেই 'পুচকে ছোড়া' ভিতরে প্রবেশ করে। এলাকার ছেলে। ওর জন্মও তিনি দেখেছেন। সবাই হাসিমুখে নতুন চেয়ারম্যানকে অভ্যর্থনা জানায়। মালেক সাহেব গ্যাট হয়ে বসে থাকেন।

নিজের আসনে বসে মোতাহার মালেক শিকদারের দিকে তাকায়... সালাম দেয়... কুশল জিজ্ঞেস করে। গোমরামুখে তিনিও সাড়া দেন।

বাদী ও বিবাদী উভয় পক্ষ ই হাজির রয়েছে। এর আগেও গত পরশুদিন প্রথমবারের মত সবাই এখানেই বসেছিলেন। কিন্তু অনেক বাক-বিতন্ডার পরে কিছু সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব আসে উভয় পক্ষ থেকে। সেগুলোই একটু ভেবে চিন্তে সমাধানে আসার জন্য তাদেরকে সময় দেয়া হয়। আজ এজন্যই আবার তারা একত্রীত হয়েছেন।

এলাকার যে কোনো সমস্যায় গুটিকয়েক মানুষ সবসময় বিচার সালিস করে এসেছে। গুঞ্জন রয়েছে বিচারের আগের রাতেই ওনারা বিক্রী হয়ে যান। আর পরদিন নিজেদের বিবেকের গলা টিপে যেন তেন ভাবে রায় দিয়ে দেন যার টাকা নিয়েছেন তাঁর পক্ষে। এভাবেই চলছে... সেই অনেক আগে থেকেই চলে আসছে...হয়তো সামনেও চলতো। কিন্তু বাধ সেধেছে এলাকার নতুন চেয়ারম্যান।

মোতাহারের টেবিলকে সামনে রেখে দুপক্ষই বসেছে। হাবিব মুন্সী একজন সৌম্য দর্শনধারী পরহেজগার মানুষ । কপালে বিশাল কালো দাগ...রাস্তা দিয়ে চলার সময়ে দুপাশের কিছু যেন দেখা না যায় সেজন্য মাথায় রুমাল দিয়ে ঢেকে চলাফেরা করেন। তাঁর বাম পাশে বসে আছে তারেক মেম্বার। এলাকার অন্যতম ধনী। বাজারে বেশ বড় চালের আড়ত আছে তার। সে এবারো মেম্বার হয়েছে। তবে চেয়ারম্যান মোতাহারের সাথে না থেকে সে এখনো মালেক শিকদারের পিছু হাটে। অনেকদিনের অভ্যাস কিনা। আর ভীমকাঠী হাই স্কুলের সিনিয়র টিচার সাহাবুদ্দীন... সে নতুন কাউকে পরিচয় দিতে গিয়ে নিজের নামের শেষে বিএস সি, বি এড বলতে দ্বিধাবোধ করে না। মালেক শিকদারের ডানে বসেছে সে। এই চারজন মিলে একটা দুষ্টচক্র। আর এদের প্রধান হলেন হাবিব মুন্সী। সে এদেরকে যেভাবে পরিচালিত করে, ওনারা সেভাবে চলেন।

মোতাহার বাদী ধলু খাঁ কে জিজ্ঞেস করল, ' আপনার মেয়েকে জিজ্ঞেস করেছিলেন? উত্তরে ধলু খাঁ হ্যা সুচক জবাব দেয়। মালেক শিকদার মোতাহারের পরের প্রশ্ন করার আগেই ফস করে বলে উঠেন,' তোমার মেয়ে কি জবাব দিয়েছে? কোব্বাতের ছেলেকে বিয়ে করতে রাজী হয়েছে?'

মোতাহার একটু বিরক্ত হয়। তবে চেহারায় সেরকম কোনোভাব ফোটে না। সে জানে কতটা সংগ্রাম করে নিজ গ্রামের চেয়ারম্যান হয়েছে। কিছু ধান্দাবাজী করবে... টাকা কামাবে... এগুলোর জন্য সে নির্বাচন করেনি। তাঁর টাকা পয়সার কমতি নেই। উত্তরাধিকারসূত্রে সেও অনেক জমি-জমার মালিক। কিন্তু তাঁর নিজের গ্রামকে কিছু দুষ্ট মানুষের হাতে বছরের পর বছর নিপীড়িত হতে দেখে অনেক ভেবে চিন্তে এই পথে নেমেছে। ওর শুভানুধ্যায়ীরা তাঁকে অনেক নিষেধ করেছে... ' এইটা তোমার পথ না... তুমি একা কি করবা... ওরা অনেক শক্তিশালী... ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু সবাইকে একটা কথাই শুধু সে বলেছে, ' বুঝলাম আমি একা, ওরা অনেক...অনেক শক্তিশালী... তাই বলে একবার চেষ্টা করব না? আর আপনাদের ভোটেই তো ওরা শক্তিশালী হতে পারছে। এবার একবার সেই শক্তিটা আমাকে দেন!' গ্রামবাসী কথা রেখেছে... বিপুল ভোটে মোতাহারকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেছে।

ধলু খাঁ মালেক শিকদারের কথার কোনো জবাব দিলো না। যেন শোনেই নি সে কি জিজ্ঞেস করেছে। মোতাহার এবার কথা বলে, ' চাচা, আপনার মেয়ে কি বিয়েতে রাজী হয়েছে?' যাকে জিজ্ঞেস করা হচ্ছে সেই ষাটোর্ধ মানুষটি কোব্বাত মিয়ার দিকে তাকিয়ে চোয়াল দৃঢ় করে জলদগম্ভীর স্বরে বলে, ' না, মাইয়ায় এই বিয়া করব না কইছে। আমি থানায় যামু।' এই কথা শেষ হবার সাথে সাথে অফিসের ভিতরে সবাই কথা বলা শুরু করল। সবাই এক সাথে কথা বলছে... তাই কারোটা স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে না। তবে ' তাইলে এই সালিসের কি দরকার...' 'বেশী বাড় বাইরো না মিয়া'... ' একবার ভাবছো তোর মাইয়ার কি হবে'... তুমি আমার ...ল্টা করতে পারবা... এগুলোই শোনা গেলো।

একটু জোরেই কথা বলতে হয় মোতাহারের। এবারে সবাই থামে। বাদী সালিসে মীমাংসা করতে রাজী না। আর ঘটনাটা এমনই ন্যাক্কারজনক যে এ ব্যাপারে বাদীকে জোর করাটাও শোভনীয় নয়। ধলু খাঁ একজন বর্গা চাষী। মানুষের কাছ থেকে জমি বর্গা (বাৎসরিক লীজ) নিয়ে পার্সেন্টেজ আকারে ফসলের ভাগাভাগি করে নেয়। মোটামুটি দিন চলে যায় তাঁর বউ ও দুই মেয়েকে নিয়ে। বড় মেয়েটা ১৬ বছরের। ছোটটি ১২ বছরে পড়বে সামনের মাসে। কোব্বাত মিয়ার পানের বরজ আছে। এ ছাড়া সে নিজের জমিতে চাষাবাদও করে। কোব্বাত মিয়ার দুই ছেলের বড় জন ধলু খা'র বড় মেয়েটিকে এই সেদিন রাতের বেলা একা পেয়ে ধর্ষন করেছে। পরে মেয়ে সবাইকে বলে দেয়... ধলু খাঁ সমাজের কাছে বিচার চায় এবং সে জন্যই আজ সবাই এখানে।

মোতাহার উপস্থিত সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে, ' কোব্বাত মিয়ার ছেলে যে কাজটি করেছে তা ক্ষমার অযোগ্য। তার নিজের স্বভাব চরিত্রও ভালো না। সে নেশা করে, জেলা সদরে খারাপ মেয়েছেলের কাছে যায়। এরকম একজনকে ধলু খা'র মেয়ে যে বিয়ে না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাও প্রশংসার যোগ্য। তাই এই সালিস এখানেই শেষ করা হল। এখন ধলু খাঁ নিজে যেটা ভালো মনে করবেন উনি তা করতে পারেন।'

আবারও গুঞ্জন। তবে এবারে আগের মত বেশী না। কোব্বাত মিয়া রাগে অফিস থেকে বের হয়ে গেলো। তাঁর সাথে আরো দুজন। হাবিব মুন্সী এবারে দৃশ্যপটে উদয় হলেন। বললেন, ' বাবা মোতাহার, কাজটা কি ভালো হইলো? গ্রামের মান-সম্মানের ব্যাপার বাইরে যাওয়াটা কি ঠিক? এখন থানা পুলিশ হইলে সেতো আমাদেরই লজ্জা, তাই না?' স্মিত হেসে মোতাহার বলে, ' চাচা, আমাদের গ্রামের মান-সম্মানের ব্যাপার ঠিক আছে। কিন্তু ঘটনাটা তো এবারই প্রথম ঘ্টায়নি কোব্বাত মিয়ার ছেলে। এর আগেও তো আপনারা সবাই ওর একবার সালিস করেছিলেন। কই, সে তো ভালো হয় নি। আর দু' একজন জানোয়ারের অশ্লীল কর্মকান্ডের জন্য আমাদের লজ্জা না পেলেও চলে। বরং এদেরকে বিচারের জন্য আইনের হাতে তুলে দিলেই সবাই খুশী হবে।'

হাবিব মুন্সী ভাব দেখায় মোতাহারের কথায় সে খুশী হয়েছে। কিন্তু ভিতরে ভিতরে তাঁর জ্বলে যাচ্ছিল। সে তাঁর অনুগত তিনজনকে সাথে নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের অফিস থেকে বের হয়ে আসে। সৌম্য চেহারায় মুখে হাসি... ভিতরে ক্রোধের অগ্নি জ্বলছে। সঠিক সময়ের অপেক্ষায় রইলেন তিনি। বাচ্চা ছেলে... কতদিনই আর টিকতে পারবে... একা একা... ভাবতেই তাঁর মুখের হাসিটা আরো প্রসস্ত হয়।

নিজের চেয়ারে একা বসে আছে। কিছুটা বিমর্ষ মোতাহার।

ভাবে, আজ যা হল তা কি ঠিক হয়েছে? এই দুষ্ট চক্রকে নিয়েই তাঁকে সামনের দিনগুলো চলতে হবে। লতায় পাতায় মিলিয়ে ওরা সবাই একে অপরের আত্মীয়। পারিবারিক বন্ধনের সাথে সাথে সহাবস্থানেরও একটা বাঁধন রয়ে গেছে। শুরুতেই ওদের সাথে বিরোধ...!!

আবার ভাবে, সে এই পথে নেমেছে কেন? এদের হাত থেকে গ্রামবাসীকে রক্ষা করার জন্যই কি নয়? তবে আর ভাবনা কেন। পথ তো একটিই। এখন শুধু সামনে এগিয়ে যাওয়া । আর চলার পথে বন্ধুর অভাব হবে না। সে সত্যের পথে আছে। অশুভ যতই শক্তিশালী হোক না কেন, সত্যের কাছে কিছুইনা।

এবারে চেয়ারে হেলান দিলো... একটু আরামবোধ করতে চায়।

সামনের পথ অনেক বন্ধুর।

যেটুকু সময় পাওয়া যায়, রিল্যাক্স করে নেয়াই ভালো।

... ...

দেখতে দেখতে একটি মাস কেটে যায়।

মধুমাস... জামাই ষষ্ঠী শেষ হয়। গ্রামের ঘরে ঘরে আনন্দ... যাদের ঘরে বিবাহিত মেয়ে রয়েছে, সেখানে এক স্বর্গীয় প্রফুল্লতা বিরাজ করছে। বাবা-মা জামাইদেরকে নিয়ে ব্যতিব্যস্ত। শ্যালিকা ও দুলহা ভাইদের মধুর খুনসুটি... শ্যালক দুলাভাই মিলে মজার সময়গুলো কাটানো... আর কি চাই!

পারুলের এই দিনক'টি যে কীভাবে কেটেছে, একমাত্র সেই জানে। সেদিন নৌকা থেকে নামার পরে ওর বাবা এগিয়ে আসে। হাসিমুখে নৌকার ভিতর থেকে বিশেষ একজনের অপেক্ষায় থাকে। মেয়ে নেমে বাবার কদমবুচি করে। মায়ের দিকে এগিয়ে যায়। ছোট দু' ভাই-বোন, বোনের আনা মমতার ভাগাভাগিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। পারুলের মা মেয়ের দিকে নিস্পলক তাকিয়ে থাকে। কিছু একটা অমঙ্গল আশংকায় তাঁর বুক কেমন করে।মেয়ে তাঁকে জড়িয়ে ধরে। দু'ফোটা চোখের জল সামলাতে মেয়ের পৃথিবী যেন দুলে ওঠে । আকাশ মাথায় ভেঙ্গে পড়বার উপক্রম হয়। মাঝিকে প্রাপ্য টাকার চেয়েও অধিক বখশিস দিয়ে বিদায় করে। দুপুরের খাবার খেয়ে যাবার কথা বললেও মাঝি রাজী হয় না।

বাবা জিজ্ঞেস করে, ' কিরে, দুলহা মিয়া কই? তোরে একা পাঠাইলো?' ঘাটে আরো অনেক কৌতূহলী মানুষের সামনে পারুল বলে, 'ঘরে চল বাবা। সে আসে নাই।' বাবা কিছু বুঝে উঠতে পারে না। আমতা আমতা করে কিছু বলার চেষ্টা করে... তারপর মেয়ের পিছু নিয়ে বাড়ির ভিতরে রওয়ানা হয়। একটা নষ্ট অতীত পিছনে ফেলে পারুল অনিশ্চিত এক জীবনের দিকে পা বাড়ায়।

বাড়ীর ভিতরে মা বাবা সময় পায়... পারুলও। এখন তো তাঁর অফুরন্ত সময়। ভনিতা না করে বলে, ' আমি তাঁকে তালাক দিয়ে এসেছি বাবা!' নিজের কানে ঠিক এই কথাগুলোই শুনেছে কিনা ওর বাবার ধান্দা লাগে। বলে,' বুঝলাম না মা। ঠিক কইরা ক'তো কি হইছে?' কি বলবে পারুল। ঠিক কোথা থেকে শুরু করবে বুঝে উঠতে পারেনা। একই কথা আবার বলে। ওর বাবার হৃদয়টা ফেটে চৌচির হয়ে যায়। কথা আসেনা। বুকের ভিতর একটা ব্যথা কিছুক্ষণ ঘুরপাক খায়। আর কিছু জিজ্ঞেস না করে ওর মায়ের দিকে তাকায়। নীরবে দু'জনের কথা হয়। পারুলের মা চোখের পলক ফেলে। সেখানে ' আমি দেখছি' এরকম কিছু জবাব পেয়ে পারুলের বাবা ঘর থেকে বের হয়। একজন পরাজিত ভাঙাচোরা মানুষ দুজন নারীকে একা রেখে ঘর থেকে বের হয়ে যায়।

মা মেয়ে কিছুক্ষণ একে অপরের দিকে চেয়ে থাকে। এরপর পারুল কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। ধীরে ধীরে সব কথা মায়ের সাথে শেয়ার করে। নিকট অতীতের ধুম্রজাল ভেদ করে স্মৃতিরা ডানা মেলে কালো আকাশে... ...

পারুল পিরোজপুর সরকারী কলেজ থেকে ডিগ্রী পাস করার পরেই ওর জন্য প্রস্তাব আসতে শুরু করে। পারুলের আরো পড়ার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু বাবা-মা'র ইচ্ছের কাছে ওর এই সুপ্ত ইচ্ছের মৃত্যু হয়। এলাকার একজন সেই সম্বন্ধ নিয়ে এসেছিল। ছেলে ঢাকায় থাকে। অনেক বড় ঘর। অন্তত পারুলদের তুলনায় পার্থক্য বেশী চোখে পড়ার মত। হাবিব মুন্সীকে নিয়ে পারুলের বাবা আর সাবেক চেয়ারম্যান মালেক শিকদার ঢাকা গিয়ে ছেলেকে দেখে আসে। সুদর্শন ছেলে তাঁদের মন কাড়ে। তারপর নিজেদের বাড়ী... সামাজিক স্ট্যাটাস এসব কিছু মিলিয়েই তাঁরা খুশী হয়। 'নাহ, মেয়ে আমার সুখেই থাকবে' বাড়ি এসে পারুলের মাকে কত বড় গলা করে ওর বাবা বলে। মা ও খুশী হয়। সপ্তাহখানেক পরে ছেলের অভিভাবক ঢাকা থেকে এসে পারুলকে দেখে যায়। তাদেরও মেয়ে পছন্দ হয়। দুপক্ষের ইচ্ছেতেই দিন তারিখ ধার্য হয়।

খুব ধুমধাম করে পারুলের বিয়ে হয়ে যায়। গ্রামের সবাই এই নব দম্পতিকে দেখে ইর্ষা করে। মনে মনে বলে,'বাহ! কত সুন্দর জুড়ি'। আসলেই তাই। প্রথম দেখায় পারুল নিজেও মাহতাবকে দেখে চোখের আলোয় জ্বলে ওঠে। ওর হৃদয়ের বীণা অচেনা সুরে বেজে চলে। কিন্তু ওর এই আনন্দ... হৃদয়ের তারে বেজে ওঠা মধুর ঝংকার অচিরেই শেষ হয়ে যায়। ঢাকায় গিয়ে নিজের শ্বশুর বাড়ীতে তৃতীয় দিনেই সবার আসল চেহারা সামনে চলে আসে। মাহতাব যে একজন অ্যালকোহলিক! শুধু এটা হলেও ব্যাপার ছিল না। সময়ের সাথে সাথে পারুল মানিয়ে নিতো... মাহতাবকে ফিরিয়ে আনতো এই মরন নেশা থেকে। কিন্তু ড্রাঙ্ক অবস্থায় সে পারুলের সাথে যাচ্ছে তাই ব্যবহার করা শুরু করে। একজন বিকৃতমনা নপুংশক সে। পারুলের সাথে টর্চার করা ছাড়া একজন পুরুষ হিসাবে সে ওর সামনে দাঁড়াতে পারে না। একজন অক্ষম পুরুষ।

নিজেকে নিজে প্রশ্ন করে পারুল। কি করা উচিত তাঁর। নিজের ভাগ্যের ওপর তো ওর কোনো হাত নেই। এই স্বামী-সংসারেই তাঁকে মানিয়ে চলতে হবে। কিন্তু মাহতাব দিন দিন ওকে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করেই চলে। শ্বশুর শ্বাশুড়ি দেখেও না দেখার ভান করেন। বরং শ্বাশুড়ি ছেলেকে ঠিক করতে না পারার দায় ওর ওপর চাপাতে চায়। বিভিন্ন মানুষের উদাহরণ টানেন। তাঁরা কীভাবে মদ্যপ স্বামীকে পথে এনেছে সেগুলো সবার সামনে আলোচনা করেন... ওর ব্যর্থতাকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেন।

কিছুদিন পরে শুরু হয় অন্যদিক থেকে কথার নির্যাতন। মাহতাবের আত্মীয়-স্বজন নতুন বউকে দেখার জন্য আসে। আর মহিলাদের মেয়েলি টাইপ কথাবার্তা তো ঘুরতে থাকে মেয়ের বাপের বাড়ি থেকে ছেলেকে কি দিলো না দিলো সেগুলো নিয়ে। পারুলের বাবা তাঁর যতটুকু সামর্থ্য করেছেন-দিয়েছেন। কোনো দিক থেকে কার্পণ্য করেননি। কিন্তু তারপরও মাহতাবদের সামাজিক মর্যাদা অনুযায়ী তাঁর সেভাবে দিয়ে থুইয়ে খুশী করাটা সম্ভবও ছিল না। শ্বশুর বাড়ির লোকেরা জিনিসপত্র দেখে মোটেও খুশী হয় না। ইচ্ছেকৃত কথার বাণে জর্জরিত করে পারুলকে। প্রতিদিনই সে মরতে থাকে এই পরিবারে।

এভাবে মাস ঘুরে বছর যায়...বছরগুলি যে কিভাবে চলে যায়! সেই সময়গুলো পারুলের কাটে উদ্বেগ অশান্তি আর হীনমন্যতায়। এলাকার একটি কিন্ডারগার্টেনে চাকুরি নেয় পারুল। কচি কচি বাবুদেরকে নিয়ে জীবনের একটি না পাওয়া আশার মিছে স্বপ্ন দেখে সে... অতৃপ্তি মিটাতে চায়। এদিকে মাহতাবের মা দাদী হবার জন্য উদ্গ্রীব হয়ে পড়ে। আর সন্তান না হবার জন্য মুহুর্তে মুহুর্তে পারুলকে দোষারোপ করে। পারুল সব সত্য জেনেও নিজের ঘাড়ে দোষ নিয়ে চুপ থাকে। এর মাঝে জামাই ষষ্ঠীর দিনে ওরা দুজন পারুলের বাড়ীতে নাইয়র আসে... দুজনে খুব স্বাভাবিক থাকে... মিথ্যে অভিনয় করে। এরপর ফিরে এসে আবারো সেই রোবট জীবনে অভ্যস্ত হয়। সেই তুতু ম্যায় ম্যায়... দিনরাত গঞ্জনা সহ্য করে যাওয়া... রাতের পর রাত অক্ষম পুরুষটির বিকৃত যৌন জীবনের সাধ মিটানো... নির্ঘুম কাটানো রাতের পর রাত।

এরপর একদিন ওরা পারুলের সকল ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে দেয়। পারুলের বাবাকে কথায় কথায় গাল দেয়াটা তো স্বাভাবিক ব্যাপার ছিল। মাহতাবের সব থেকে ছোট ভাইয়ের জন্মদিনের উৎসব। অনেক মানুষ এসেছে। সেই অনুষ্টানেই মাহতাব ড্রিঙ্ক করে এসে সামান্য একটা ব্যাপার নিয়ে পারুলের সাথে ঝগড়া শুরু করে। ধীরে ধীরে সে উগ্র থেকে উগ্রতর রূপ ধারন করে। এক পর্যায়ে গায়ে হাত তোলে। আর ওর বাবা-মাকে নিয়ে অকথ্য ভাষায় গালাগাল তো রয়েছেই। পারুলের মাথার এক পাশে মাহতাবের উন্মত্ততায় কেটে যায়। মুখ এবং চোখের পাশে কালসিটে দাগ পড়ে । আর হৃদয়ের ক্ষত? সেতো বাইরে থেকে দেখা যায় না।

এতোগুলো মানুষের সামনে প্রচন্ড অপমানে পারুল নিজের রুমে ঢুকে ভিতর থেকে দরোজা বন্ধ করে দেয়। মাহতাব দরোজা ভেঙ্গে ফেলার উপক্রম করে... একপর্যায়ে পারুল ভিতর থেকে দরোজা খুলতে বাধ্য হয়। উপস্থিত অতিথিরা সবাই চলে যেতে যেতে ওর শাশুড়ির কথা শোনে। সে সবাইকে শুনিয়ে শুনিয়ে বউ এর যত দোষ বলতে থাকে।এক সময়ে মাহতাব রুমের ভিতরে ঢুকে দরোজা বন্ধ করে। আহত পারুলের উপর ওর বিকৃত কাম-লালসা মেটাতে চায়। কিন্তু একজন অথর্ব পুরুষ সময়ের আগেই নিঃশেষ... নিস্তেজ হয়ে নিজের বুঝটা বুঝে নেয়।

একটা সপ্তাহ নিজের বাহ্যিক ক্ষতগুলো ঠিক হবার জন্য পারুল স্কুলেও যায় না। ওর এক সহকর্মী বাসায় আসে। সে সব দেখে, শোনে। দুঃখ পায়। প্রতিবাদ করার কথা বলে। পারুল চুপ করে শোনে। কিন্তু সিদ্ধান্ত নিতে পারে না।

কিছুদিন পরে পারুল এবং মাহতাবকে রেখে বাসার সবাই তাদের গ্রামের বাড়িতে এক বিয়ের অনুষ্ঠানে যায়। সপ্তাখানেক থাকবে। প্রথম রাতেই বাজারের এক মেয়েকে নিয়ে মদ্যপ অবস্থায় বাসায় ফিরে মাহতাব। পারুলের শেষ যে সুতোটুকু ছিল মাহতাবের সাথে- সেই ভালোবাসার লিঙ্কটা এক নিমিষে কেটে যায়। নিজের চোখে মাহতাবের এতোটা নীচে নেমে যাওয়া দেখে নিজের প্রতিই ঘৃনায় দম বন্ধ হয়ে আসে। প্রতিবাদ করলে ওকে মেরে ধরে বাড়ির বাইরে বের করে দরোজা বন্ধ করে দেয় মাহতাব। একই সাথে দরোজা দুই দিক থেকেই বন্ধ হয়ে যায়। পারুলের মনের দ্বারও একেবারে বন্ধ করে দেয় পারুল নিজেই। সেই রাতটা সে সহকর্মীর বাসায় কাটায়। পরের দিন সহকর্মী ওকে এক মহিলা সংগঠনে নিয়ে যায়। এরা নারীর উপর নির্যাতনের বিরুদ্ধে বেশ সোচ্চার। তারাই তার স্বামীকে ডিভোর্স এবং নারী নির্যাতনে মামলা করার পরামর্শ দেয়। কিন্তু পারুল শুধু ডিভোর্স দিতে চায়। বাড়িতে বাবা-মাকে কিছুই জানায় না। মাহতাবের পরিবারের সবাই এসে সব ঘটনা শোনে। প্রথমে একটু হৈচৈ করার চেষ্টা করে। কিন্তু পারুলের পাশে মহিলা সংগঠনটি থাকায় তারাও চুপ মেরে যেতে বাধ্য হয়। কারণ তা না করলে মামলায় জড়াতে হবে এটাও বুঝে যায় তারা... ... ...

জীবনের সকল আশা নিরাশায় পরিণত... শুন্য বুকে শেষ হয়ে যাওয়া অনুভূতি নিয়ে গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসে পারুল।

তবে সে আশা হারায় না। জীবনের পথে পথে বাধাঁ থাকেই। তাকে অতিক্রম করে সামনে আগানোটাই তো মানব ধর্ম। জীবনে যখনই উপলব্ধি হয় যে, আমি তো শেষ, ঠিক সেখান থেকেই আবার নতুন করে জীবনের পথচলা শুরু হয়। পারুলও সেভাবে জীবনের পথে চলা শুরু করে।

হেঁটে হেঁটে খালের পাশের কৃষ্ণচুড়া গাছ যে ক্লাব ঘরটিকে পরম মমতায় ছায়া দিয়ে রেখেছে- সেদিকে মনের অজান্তে কখন যে সে চলে এসেছে টেরও পায়না। এখানে যে মানুষটি থাকে, তার প্রতি প্রকৃতি যতটা মমতা ঢেলে দিচ্ছে... পারুলের মনের গভীরে তার থেকেও ঢের মমতা জমে আছে। কিন্তু এতোদিন সে সেটা অনুভব করতে পারেনি।

অনুভব করেনি?

নাকি জোর করে দমিয়ে রেখেছিল। আজ রিক্ত হবার দরুন ই কি সেই মমতা সেনাবাহিনীর মত চারদিক থেকে ঝাপিয়ে পড়তে চাচ্ছে?

পায়ে পায়ে ঘরটির দরোজার সামনে গিয়ে সে অপেক্ষা করে। ওকে যা সিদ্ধান্ত নেবার এখুনি নিতে হবে। দরোজার ওপাশে জীবন ওর জন্য পুর্ণতার ডালি নিয়ে হয়তোবা অপেক্ষা করছে... হয়তো এগুলো সব ওর অলীক ভাবনা। আর ও যেখানে দাঁড়িয়ে আছে- সেই নোম্যান্স ল্যান্ডে পায়ের নীচে মাইন বসানো। খু্ব সাবধানে সেই পথে চলতে হবে। কি করবে পারুল? জীবন-মৃত্যু এক পলকের দূরত্বে... কত কাছাকাছি! ভালোবাসার ঘ্রাণ পাচ্ছে সে এখান থেকেই! পুরনো বকুলফুলের মত ভালবাসার সেই ঘ্রাণ ছোট্ট এই ক্লাব ঘরের ভিতরে ওকে টেনে নিতে চাচ্ছে। যা করবার এখুনি করতে হবে ওকে।

কিন্তু সব ডিসিশন কি পলকেই নেয়া যায়!! Good Luck

(ক্রমশঃ)

বিষয়: সাহিত্য

১১৩১ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

261755
০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ০৮:৩৮
আজিম বিন মামুন লিখেছেন : ভয়ানক সুন্দর!অসম্ভব ভালো হয়েছে।আরো অনেক পথ পাড়ি দেয়ার শক্তি আপনার মাঝে জমা হচ্ছে প্রতিনিয়ত।আরো অনেক দূরে যেতে হবে যে... Rose Rose
০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ০৯:৪৬
205716
মামুন লিখেছেন : ধন্যবাদ মামুন ভাই।
আপনার মন্তব্য আমাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবার শক্তি দিবে ইনশা আল্লাহ। অনুভূতি রেখে যাবার এবং ব্লগে সময় দেবার জন্য আবারো অনেক অনেক ধন্যবাদ।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
261757
০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ০৮:৪৯
দুষ্টু পোলা লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ
০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ০৯:৪৭
205717
মামুন লিখেছেন : আপনাকেও অনুভুটি রেখে যাবার জনয ধন্যবাদ।
শুভেচ্ছা রইলো।Happy Good Luck
261903
০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ০৪:৩৭
কাহাফ লিখেছেন : "তবে সে আশা হারায় না।জীবনের পথে পথে বাধা তো থাকেই।তাকে অতিক্রম করে সামনে আগানোটাই মানব ধর্ম।উদ্দিপনা মুলক অনেক সুন্দর উপস্হাপনা।তবে দুষ্টচক্রের প্রধান হাবীব মুন্সীর চরিত্রটা গতানুগতিক ইসলামবিমুখ চক্রের সৃষ্টি।গল্প-নাটক-উপন্যাস-সিনেমায় যেন এমন চরিত্র না হলেই নয়।বিষয়টা ভাবার সবেদন রইল।ভালো থাকার কামনা...... Rose
০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সকাল ০৮:৫০
205900
মামুন লিখেছেন : হাবিব মুন্সীকে এতো দ্রুত বিচার করে ফেললেন? একেবারে শেষে তাকে নিয়ে হয়ত আপনার চিন্তা-ভাবনার পরিবর্তন হবে আশা করি। আর এই গল্পে ইসলামের বিপক্ষে নয়; বরং ইসলামকে ব্যবহার করে নিজের স্বার্থ সিদ্ধি করছে এমন কতিপয় মানুষের মুখোশ খুলে দিতে চেষ্টা করেছি- এরা ইসলামকে অনেক পশ্চাদপদ রাখার কোনোই কসুর করতে বাকি রাখেনি।অথচ ইসলাম ১৪০০ বছর অগ্রগামি যে কোনো যুগের সাথে। ধন্যবাদ আপনাকে। সাথে থাকুন এবং এভাবে মন্তব্য করুন এবং আমাকে ভুল-ত্রুটি ধরিয়ে দিন। খুশী হব।
জাজাকাল্লাহু খাইরান।Happy Good Luck
০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সকাল ০৯:৫৬
205920
কাহাফ লিখেছেন : পঠিত অংশের মুল্যায়ণ ভাই,আগেই স্বীকার করেছি দেখার দৈন্যতা প্রচুর।খুশির আবেশে জড়িয়ে থাক আপনাদের আগামী জীবন........।Good Luck
261981
০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সকাল ১১:২৬
মামুন লিখেছেন : আপনি এ পর্যন্ত ঠিকই হয়তো দেখেছেন কাহাফ ভাই। তবে এই চরিত্রটির ভিতরে এক দ্বৈত সত্তা বিরাজ করছে। ভালো এবং খারাপের মিশেলে। আমাদের সবার ভিতরেই এরকম রয়েছে। কিন্তু হাবিব মুন্সীর বেলায় একটু অধিকতর ভাবে রয়েছে। আগামীতে তা প্রকট হবে ইনশা আল্লাহ। আর ইসলাম ধর্ম আমার প্রাণের ধর্ম। তাকে কোনোভাবেই অন্যদের মত ছোট করব না ইনশা আল্লাহ- এটি জানবেন।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। শুভেচ্ছা।@কাহাফ ভাই Rose Rose Rose

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File